সংবাদচর্চা রিপোর্ট
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল বিএনপি। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অন্যতম বড় এবং অলিখিত প্রধান বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত। পূর্বে তিনবার ক্ষমতায় ছিলো এই দলটি। তবে গত এক যুগেরও বেশী সময় ধরে দল ও দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভাটা পড়েছে। দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি যেনো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে নেতাকর্মীরাও। ক্ষমতায় থাকাকালীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলটির অন্যতম ভ্যনগার্ড খ্যাত তথা চালিকাশক্তি ছিলো নারায়ণগঞ্জ বিএনপি।
কারণ রাজধানী ঢাকার পাশ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ দেশের শীর্ষ ধনী জেলা হিসেবে পরিচিত। ক্ষমতার বাইরে থাকার পরও হরতাল, অবরোধ সহ বিএনপির সকল কর্মসূচীতে অন্যতম ভূমিকা পালন করতো নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা। ক্ষমতার বাইরে থেকেও অনেক ক্ষমতাধর নেতা ছিলো এই দলটিতে। যাদের হুঙ্কার, হুশিয়ারীতে শহর স্তব্ধ হয়ে যেতো।
প্রায় ১৪ বছর হতে চললো ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। এদিকে ১৪ মাস ধরে কারাগারে আছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।
দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ১৪ মাস কারাগারে আছেন। এই সময়ের মধ্যে তাঁর মুক্তির দাবীতে নারায়ণগঞ্জে সভা, সমাবেশ, গণ অনশন, মানববন্ধনের মতো কর্মসূচী পালনেও অনীহা লক্ষ্য করা যায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির বেশীরভাগ নেতাকর্মীদের মধ্যে। তাদের দাবী শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
দাবী আদায়ের বাহক হিসেবে তারা ফেইসবুককেই বেছে নিয়েছেন। শুধুমাত্র গুটি কয়েকজন নেতাকর্মী দেখা যায় রাজপথে নেত্রীর মুক্তির দাবীতে আন্দোলন সংগ্রাম করতে। আর বেশীরভাগ নেতাকর্মীরা মিডিয়ার সামনে চোখের জল ফেলে মায়া কান্না কাদেঁ আর ফেইসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির গুটি কয়েক নেতার রাজপথে নেত্রীর মুক্তির দাবীতে ওই আন্দোলন সংগ্রাম সরকারের ওপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। বরাবরের মতো নারায়ণগঞ্জ বিএনপির বেশীরভাগ নেতা দেখায় কেন্দ্রের অযুহাত।
আজকে প্রায় ১৪ বছর ধরে তাদের দল ক্ষমতার বাইরে রয়েছে এদিকে তাদের দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৪ মাস যাবৎ কারাগারে। কিন্তু এখনো নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সিনিয়র পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রের নির্দেশনার আশায় বসে থাকেন। তাদের ভাষ্য, কেন্দ্র থেকে যখন যেভাতে তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ঠিক সেভাবেই তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। ভবিষ্যতেও কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করা হবে।
তাদের এমন মতামতের পর জেলার রাজনৈতিক বোদ্ধামহলের মন্তব্য, নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা দীর্ঘ সময় ক্ষমতার স্বাদ বঞ্চিত থাকায় বর্তমানে তাদের নাজুক অবস্থা। এছাড়াও হামলা-মামলাসহ গায়েবী মামলা খেতে খেতে তারা এখন ক্লান্ত। তাই তারা এখন রাজপথে থাকতে চায় না। আর ঠিক সে কারণেই তারা কেন্দ্রের অযুহাত দেখায়। কেন্দ্রের নির্দেশনা ছাড়া যদি তারা রাজপথে নেত্রীর মুক্তির দাবীতে আন্দোলন সংগ্রাম করা করে তাহলে কী তাদের কেন্দ্র থেকে নিষেদ করা হবে? যে নেত্রীর মুক্তির দরকার নেই, আন্দোলন সংগ্রাম করতে হবে না, রাজপথে থাকতে হবে না। এমনটা যদি না হয় তাহলে কেনো তারা তাদের নেত্রীর মুক্তির দাবী জানাচ্ছে না। কেনো মুক্তির দাবীতে আন্দোলন সংগ্রাম করছে না। শুধু কেন্দ্রের দোহাই দিলেই হবে না নিজেদেরও অনেক ভুলভ্রান্তি আছে সেগুলো স্বীকার করতে হবে।
রাজনৈতিক বোদ্ধামহলের এমন মন্তব্যর প্রতিক্রিয়া জানতে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির বেশ কিছু নেতাকর্মীদের সাথে কথা হয় দৈনিক সংবাদচর্চার প্রতিবেদকের। তারা বলেন, নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকতো তাহলে অনেক আগেই এই সরকারের পতন হতো। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন ঐক্য নাই যার ফলে এই বেহাল অবস্থা। আজকে ১৪ মাস যাবৎ নেত্রী জেলে যিনি কিনা দেশের তিন বারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আজকে তিনি জেলে মৃত্যু শয্যায়। অথচ এতো নেতাকর্মী থাকা সত্ত্বেও নেত্রী জেলে পচেঁ মরছেন। কেউ কোন প্রতিবাদ জানাচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জ সকল স্তরের নেতাকর্মীরা যদি একতেও রাজপথে নামতো তাহলে নারায়নগঞ্জ স্তব্ধ করে দেয়া কোন ঘটনা না। শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জ না বিএনপির নেতাকর্মীরা যদি ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে নেত্রীর মুক্তির দাবীতে পুরো দেশ অচল করে দেয়া সম্ভব।
স
চেতন মহলের মতে, তারা চাইলেই ঐক্যবদ্ধ হতে পারে এবং তাদের নেত্রীর মুক্তির দাবী জানাতে পারে। তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া জেলে এটা তাদের ব্যর্থতা। আর তাদের ব্যর্থতার ফল পাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া।